শেখ মোঃ হুমায়ুন কবির, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদকে ঘিরে মোমিনের হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দণ্ডখুশির স্নিগ্ধ সমীরণ। মহান স্রষ্টার দরবারে পরম কৃতজ্ঞতায় নুয়ে পড়ে আনুগত্যের শির। এ আনন্দণ্ডকৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুনির্ধারিত মাধ্যম হলো ঈদ। ঈদণ্ডআনন্দও একটি ইবাদত।
পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকা’র সম্পাদক, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব (বি,সি,পি,সি) কেন্দ্রীয় কমিটি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খান সেলিম রহমান।
শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন,
আল্লাহর রাসুল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’র বাণী-প্রণিধানযোগ্য। তিনি এরশাদ করেন, ‘‘যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যারা রোজা পালন করেছে; তাদের সম্পর্কে ফিরিশতাদের নিকট গৌরব করে বলেন- ‘‘ হে আমার ফিরিশতাগণ, তোমরা বলতো, যে শ্রমিক তার কাজ পুরোপুরি সম্পাদন করে তার প্রাপ্য কি হওয়া উচিত, উত্তরে ফিরিশতাগণ বললেন, হে মাবুদ পুরোপুরি পারিশ্রমিকই তার প্রাপ্য। ফিরিশতাগণ, আমার বান্দা-বান্দীগণ তাদের প্রতি নির্দেশিত ফরজ আদায় করেছে, এমনকি দোয়া করতে করতে ঈদের (ওয়াজিব) নামাজের জন্য বের হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আমার মহিমা, গরিমা, উচ্চ মর্যাদা ও উচ্চাসনের শপথ, আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেব। এরপর নিজ বান্দাগণকে লক্ষ্য করে আল্লাহ পাক ঘোষণা দেন, তোমরা ফিরে যাও, ‘‘আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের সাধারণ পাপরাশিকে পুণ্যে পরিণত করে দিলাম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন তারা ক্ষমা প্রাপ্ত অবস্থায় (বাড়িতে) প্রত্যাবর্তন করে।’’ (আততারগীব ওয়াত তারহীব) ঈদুল ফিতর-এর ফযীলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে হযরত সাঈদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের দিনে আল্লাহর ফিরিশতাগণ রাস্তায় নেমে আসেন এবং গলিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন- মুসলমানগণ, তোমরা আল্লাহর দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তিনি তোমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইবাদত কবুল করে অসংখ্য পুণ্য দান করে থাকেন। রোজা রাখার আদেশ করা হয়েছিল তোমাদেরকে, তা তোমরা পালন করেছো যথাযথভাবে। রাতেও জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেছো। অতএব যাও, তাঁর নিকট থেকে গ্রহণ কর তোমাদের ইবাদতের প্রতিদান। (তাবারানী) হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাকের বাণী- ‘‘ রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’’ ঈদের দিনে আল্লাহ তায়ালার এ ঘোষণা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ঈদ শুধু আনন্দই নয়, ইবাদতও বটে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, ‘‘ যে ব্যক্তি ঈদের রাতে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের নিয়তে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে, তার অন্তর কিয়ামতের বিভীষিকা হতে মুক্ত থাকবে।’’ মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, ‘‘ যে ব্যক্তি পাঁচটি রজনী জাগ্রত থেকে ইবাদত করে তার জন্য বেহেশত্ ওয়াজিব হয়ে যায়। রজনীগুলো এই- জিলহজ্ব মাসের অষ্টম, নবম ও দশম তারিখের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত এবং শাবান মাসের পনের তারিখের রাত অর্থাৎ শবে বারাআত।’’ এতেই অনুধাবন করা যায় ঈদুল ফিতরের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
খান সেলিম রহমান আরও বলেন, পবিত্র রমজানকে বলা হয়েছে সহানুভূতির মাস। রমজানের এ সহানুভূতির শিক্ষা কাজে লাগিয়ে আমাদের উচিত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সমাজের অসহায়, দুর্দশাগ্রস্ত, ফকির, মিসকিন ও অভাবী লোকদের যথাসম্ভব সহযোগিতা করা।
পবিত্র কোরআনে রয়েছে- ‘ওয়াফি আমওয়ালিহিম হাক্কুল্ লিস্ সায়েলে ওয়াল মাহরুম, অর্থাৎ তাদের সহায়-সম্পত্তিতে অভাবী প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। এটি এমন নয় যে, অভাবী মানুষদের কিছু দিয়ে আমরা তাদের প্রতি করুণা করলাম; বরং সম্পদশালীদের সম্পদে নিরন্ন মানুষের জন্য খোদাপ্রদত্ত ও নির্দেশিত অধিকার জেনে ও মেনেই তাদের সহযোগিতা করতে হবে। ঈদের শিক্ষা মানবতার, মহানুভবতার ও মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা, মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখ মোচন, আনাহারীর মুখে অন্ন তুলে দেয়া, বস্ত্রহীনকে পোশাকের ব্যবস্থা করা ঈদের অন্যতম আচার, প্রকৃত মানুষেরা এরই মাঝে আসল আনন্দ খুঁজে পান।
ঈদ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, সমৃদ্ধি ও ভ্রাতৃত্ব। প্রতি বছর ঈদ আমাদের জীবনে সব আনন্দ, ভালবাসা এবং আশীর্বাদ নিয়ে আসে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের মহিমায় সকল মুসলিম উম্মাহর জীবনে উদ্ভাসিত হোক। পবিত্র ঈদুল ফিতরের এই আনন্দঘন দিনে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও বন্ধনের মধ্য দিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই দিনটিকে আনন্দের উৎসব হিসেবে পালন করে। এ ছাড়া রমজানের এক মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করেছি তা যদি সমাজ ও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলে ভালো হয়।
ঈদের দিন ধনী-গরীব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল সবার মাঝে, গ্রামে গ্রামে, সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে। এই দিনে সর্বস্তরের মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।
খান সেলিম রহমান আরও বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন। মানবতার মুক্তির দিকনির্দেশনা হিসেবে ইসলামের অর্থ ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক। বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতিতে ভরে উঠুক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদ শুধু আনন্দের বার্তাই নিয়ে আসে না, ইসলামে সাম্যের এক মহান পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করে। পবিত্র ঈদুল ফিতর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও আনন্দ।
সবাইকে জানাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।
শুভেচ্ছান্তে:- খান সেলিম রহমান
সম্পাদক:- জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকা
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি:- বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাব (বি,সি,পি,সি) কেন্দ্রীয় কমিটি।